ব্রেকিং নিউজ
পাইকগাছায় সাবেক ইউপি সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত রংপুরের সুধী সমাজ ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হাজীগঞ্জে বিয়ের ৪ মাসের সন্তান প্রসব নববধূ আগামীকাল রবিবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ , জানা যাবে যেভাবে পাইকগাছায় লবন পানি বন্ধের দাবীতে পথসভা অনুষ্ঠিত দাকোপে হকার্স ইউনিয়নের আহবায়ক কমিটি গঠন
×

সৌগত কর, খুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২/৩/২০২১ ৬:১৪:৩০ PM

বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষা বনাম নৈতিকতা ও মূল্যবোধ

মাধ্যমিকের ব্যাকরণে ভাবসম্প্রসারণ পড়েছিলাম একটা,“বিদ্যা সুজনকে করে বিনয়ী, দূর্জনকে করে অহংকারী।” তখন লাইন দুটির অর্থের ব্যাপকতা মনকে নাড়া দিতে না পারলেও,এখন হরহামেশাই লাইন দুটিকে নিয়ে ভাবনায় পড়ে যাই। যিনি কথাটি আবিষ্কার করেছিলেন তাঁর জ্ঞানের গভীরতা কথা স্মরণ করে ও মাথা নত হয়ে আসে।

আরো পড়ুন:


পায়ে হেটেঁ ১৫০ কি.মি. পাড়ি দিবেন কুবির তিন রোভার


বর্তমানে দেশে যে হারে স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাতে কয়েক বছরের মধ্যেই যে শিক্ষা,সাধারণ মানুষের একেবারে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

দেশের সর্বত্র এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। শতভাগ শিক্ষিত জাতি হিসেবে আমাদের, বিশ্বের দরবারে আত্মপ্রকাশ করা চাই-ই চাই। তাতে যদি গ্রামে-গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাও সই।

আঠারো কোটির এই দেশে, বর্তমানে একটা বিরাট অংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সর্বোচ্চ পীঠস্থান। নিঃসন্দেহে এখানকার পরিবেশ শিক্ষার অনুকূল।

অন্তত দেশের মানুষ তাই মনে করে। এজন্যই একজন অক্ষরজ্ঞানহীন চাষাও চায়,কষ্ট করে হলেও তার সন্তানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে।তার ঔরসজাত বংশধর উচ্চশিক্ষা লাভ করে তার মুখ উজ্জ্বল করবে।এমনই ভাবনা লক্ষ্য বাবার মনে।কিন্তু এতো গেল দেশের মানুষের হৃদয় স্থিত সুপ্ত বাসনা।বাস্তবে আমাদের

বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কেমন? কি শিখছি আমরা?কি বা শেখাচ্ছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা?আমাদের শিক্ষাঙ্গন টাই বা কেমন?শিক্ষাবান্ধব?মুক্তবুদ্ধি চর্চা হয় এখানে?নাকি পাশ্চাত্য আধুনিকতার অন্ধ অনুকরণের প্রতিযোগিতায় মত্ত আমরা? আমাদের সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছি না তো আবার? ও হ্যাঁ। এখানেতো আবার নষ্ট রাজনীতির ভাগাড় ঘরও রয়েছে।

কখনো অন্য মতের অনুসারীদের পিছে প্রকাশ্যে চাপাতি নিয়ে ছুটছি,কখনোবা কে আগে শহীদ মিনারে ফুল দেবে,এই নিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছি।আরে আমরা যে বাঘের সাথে বসবাস করা জাতি।লড়াই করতে দুইবার ভাববো নাকি?মানুষ অন্য মতের সমর্থন কেন করবে? আমি যে একমাত্র সঠিক। সব মানুষ আমার পথে আসুক।

এমনই ভাবনা আমাদের উদীয়মান তরুন রাজনীতিকদের মনে।আমরা নিজেকে শিক্ষিত করার থেকে অন্যকে উপদেশ দিতে পছন্দ করি বেশি।আর জনগনের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করাটাও তে একটা যোগ্যতা।

বিশ্ববিদ্যালয় এমনই একটা অদ্ভুত জায়গা,যেখানে সব ছেলেরাই নারী অধিকার নিয়ে কথা বলে,ধর্ষণ হলে সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপিয়ে দেয়।কালো প্রোফাইলে ঢেকে যায় ফেসবুক।

অথচ আমরাই আবার বান্ধবীকে হোটেলে ডেকে নিয়ে,ধর্ষণ করে,ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মেরে ফেলি।আর হ্যাঁ,রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় আমাদের চোখ কিন্তু ঠিক-ই খুঁজে চলে কোন মেয়ে কত হট ড্রেস পরে আসছে।

সে যাই হোক।আমরা কিন্তু আবার শিষ্টাচার শেখাই।ভুলে গেলে চলবে না।নিজে শত দোষ করলেও সেটা মানা যায়,তাই বলে অন্যের দোষ কেন মেনে নেব আমি।নাগরিকত্ব পেয়ে গেছি যে।

স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক আমি।বিশ্ববিদ্যালয়ে,এমন অনেক মাকাল ফল গোছের লোকজনের সাথে  আপনার পরিচয় হওয়ার সৌভাগ্য হবে যারা নিজেদের বদঅভ্যাসগুলো কে স্মার্টনেস বলে মনে করে।এরা ভাবে মানুষকে নিজের শৃগাল রূপ দেখানোও একটা আর্ট,যেটা সবার মধ্যে থাকে না।এখানে ভদ্রতাকে উপহাস করে দম্ভ।বিনয় কে অপমান করে অহংকার।

শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য যে মানুষের ভিতরকার পশুত্বকে নাশ করে মূল্যবোধ ও মানবিকতাবোধ কে জাগ্রত করা সেটাই আমরা এখন ভুলতে বসেছি।আমরা নামাজের সময় মুখে লাগাম দিই, গান গাওয়া বন্ধ রাখি।

অথচ অপেক্ষায় থাকি কখন নামাজ শেষ হবে,কখন আবার গালাগাল শুরু করব।আমরা কিন্তু আবার মুক্তমনা। কারো ব্যক্তিগত জীবনের নাক গলাই না। আসলেই তো, কেউ যদি নিজে নিজে খারাপ হতে চায়, নষ্ট হতে চায়, আমাদের কি তাতে।

রবিবাবুর জীবদ্দশায়, আমাদের এত উন্নতি দেখে যেতে না পারলেও, তার দার্শনিক সত্তা  হয়তো কবিসত্তা কে ডেকে বলেছিল,❝ সাত কোটি বাঙালির হে মুগ্ধ জননী,জন্মাইয়া রেখেছ শুধু মানুষ করনি।❞

বলা হয়ে থাকে, শিক্ষা মানুষের অজ্ঞানতাকে দূর করে। কিন্তু আজ উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে যখন প্রকৃত  শিক্ষার অভাব দেখতে পাই, তখন অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে এই ভেবে যে, আমাদের শিক্ষায় কোনো গলদ নেই তো!

যে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য আমাদের শ্রদ্ধেয় মনীষীরা আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

জ্ঞানের দিব্য স্পর্শে এসে যেন আমরা  সত্যিকারের “মানুষ” হয়ে উঠতে পারি।সেই শিক্ষায় কোন ত্রুটি হয়ে যায়নি তো! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সঠিক পথে চালনা করছে তো!

পূজনীয় শিক্ষকেরা কি, জ্ঞানের পবিত্র ধারাকে সঠিকভাবে আমাদের অন্তরে প্রবেশ করাতে পারছেন!যদি পারেন,তবে কেন আজ ছাত্রসমাজের এত অধঃপতন।

যে ছাত্রসমাজ একসময় মাতৃভাষা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীনতার ডাকে যুদ্ধের ময়দানে নেমে গিয়েছিল। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল।সেই ছাত্র সমাজের মধ্যে আজ দেশপ্রেম নেই, মানবতাবোধ নেই, নৈতিকতার কোন স্পর্শ নেই। সর্বত্রই আজ অশিক্ষা ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট লেজুড়বৃত্তি।

পন্ডিত নেহেরু বলেছিলেন, “দেশ ভালো হয়,যদি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।” আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের তো কোনো অভাব নেই।অভাব আছে নৈতিক শিক্ষার, মূল্যবোধ চর্চার। বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা বছরজুড়ে শত শত স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স করানো হয়।

অথচ শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ চর্চার উপর কোন কোর্স কখনো হতে দেখিনি।চার-পাঁচ বছর পর এই শিক্ষার্থীরা যখন কর্মক্ষেত্রের যাবে, তখন তাদের মধ্যে আদর্শ ও নৈতিকতার ছিটেফোটাও থাকবে না। অবশ্য থাকার কথাও নয়।

কারণ, কথায় আছে,“অনভ্যাসে বিদ্যা ত্যাগ।”চর্চা না থাকলে সবকিছুই ভুলে যায় মানুষ। সেটা পড়ালেখা হোক খেলাধুলা হোক কিংবা নৈতিকতা হোক। এতো সবাই জানে।যাই হোক।এই শিক্ষার্থীরা একদিন কর্মক্ষেত্রে যায়।জাতির কল্যানে,দেশের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মহান ব্রত নিয়ে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়,দেশের অর্থনীতির চাকা সামনে এগিয়ে নিতে না পারলেও ব্যাক্তিগত অর্থনীতির চাকা তরতর করে এগিয়ে চলে।এবং পর্বতের চূড়া থেকে গড়িয়ে পড়া ক্ষুদ্র পাথরের ন্যায় ক্রমশ এই চাকা গতিসঞ্চার করতে থাকে।শুরুটা হয়তো খুবই ধীরে আর অলক্ষ্যে হয়।

তবে একবার নিচের দিকে নামতে শুরু করলে তাকে আর থামিয়ে রাখা যায় না।তো এই হলো,বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার অন্তিম পরিণতি।

বলা হয়ে থাকে, শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষ্যৎ।অর্থাৎ, জাতির ভবিষ্যৎই একদিন জাতির ভবিষ্যৎকে(দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন) নষ্ট করবে।

বলি, এখনো কি এটা নিয়ে ভাবার সময় আসেনি??

সৌগত কর

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়